আসসালামু আলাইকুম।এটা আমার প্রথম টিউন।তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন।বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স অনেকেরই প্রিয় হ্যাকিং গ্রুপ।আজ তাদেরই কিছু কথা বলব।
বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও কিছু কথা
২০১২ সালের ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাইবার স্পেসকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স গড়ে তোলেন কিছু সংখ্যক তরুন। দেশের অনলাইন নিরাপত্তা জোরদার করাও ছিল সংগঠনটির আরেকটি লক্ষ্য। নিয়মিত বাংলাদেশী সাইটের ত্রুটি পরীক্ষা করা এবং তা সাইট এডমিনকে জানানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সাইবার স্পেসকে আরও নিরাপদ রাখার মহৎ ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। মূলত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী BSF কতৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার প্রতিবাদস্বরুপ কিছু একটা করার প্রত্যয় থেকেই BBHH গ্রুপটির জন্ম। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে BSF এর অমানবিক এবং নৃশংসতা দেখে এদেশের আপামর জণসাধারনের পাশাপাশি হ্যাকারদের মনেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার ফলস্বরুপ কিছু সংখ্যক প্রবাসী এবং এদেশে বসবাসরত হ্যাকাররা BBHH গঠন করে এবং ভারত সরকারকে সতর্ক বার্তা পাঠায়। তার পর পরই ভারতীয় হ্যাকাররা এদেশীয় সরকারি ওয়েবসাইটে হামলা করে, BBHH ও পাল্টা ভারতীয় সাইট হ্যাকিং শুরু করলে লেগে যায় সাইবার যুদ্ধ।
বাংলাদেশ বনাম ভারত সাইবার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আটরশিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান নামক ব্যক্তিকে ভারতীও সীমান্তে গরু পাচারকারি সন্দেহে বিএসএফ জোয়ানরা হাত-পা বেঁধে বিবস্র করে রাইফেলের বাঁট ও লাঠি দিয়ে নির্মম ভাবে পেটায় । হাবিবুর রহমান এর দেয়া বর্ননা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় মৌরুসি সীমান্ত চৌকির বিএসএফ সদস্যরা ৯ ডিসেম্বর তাকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় বিএসএফের জওয়ানেরা তার কাছে দুই হাজার টাকা, পাঁচটি টর্চ লাইট ও একটি মুঠোফোন দাবি করে। কিন্তু সেগুলু দিতে না পারায় বিএসএফের সদস্যরা নির্যাতনের পর সারা রাত বেঁধে রাখে। পরদিন ১০ ডিসেম্বের ভোর ৪ টার দিকে আবারো নির্যাতন চালায়। বিএসএফ এর জওয়ানেরা তার পরনের লুঙ্গি খুলে ছিঁড়ে দুই ভাগ করে লাঠির সঙ্গে হাত বেঁধে দ্বিতীয় দফার মারধর শুরু করে। তারা সাত জন রাইফেলের বাঁট ও লাঠি দিয়ে গোপনাঙ্গসহ পুরো শরীরে বেধড়ক পেটায়। এ সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাবিবুর রহমান কে বাঁধা অবস্থাতেই সীমান্তের পাশে একটি সরিষা ক্ষেতে ফেলে রাখে। এই ঘটনাটি মোবাইল ফোন দিয়ে ১১ মিনিটের একটি ভিডিও করে ইউটিউবে ছেড়ে দিলে বাংলাদেশীদের মধ্যে তা চরম সাড়া ফেলে। এমনকি ভারতীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। আর এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স ভারতের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমন এর সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘটনার বিচার হিসাবে বিএসএফ-এর আদালতে অতি গোপনীয়তায় ৭ কনস্টেবলের প্রত্যেককে ৮৯ দিনের জেল দেয়া হয়। ঘটনায় জড়িত কমান্ডার প্রধান কনস্টেবল কে পদাবনতি ঘটিয়ে সাধারন কনস্টেবল করা হয়েছে। তবে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়নি। এই বিচার সত্ত্বেও সাইবার-যুদ্ধ অব্যাহত থাকে, কেননা এই বিচারকে ন্যায্য মনে করেনি অনেকেই। এমনকি ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন MASUM (মাসুম) এই বিচারকে যথেস্ট মনে করেনি।
এই সীমান্ত নির্যাতন এর ঘটনা যখন আলোচনায় তুঙ্গে, তখনই ২০ জানুয়ারি কুমিলার দক্ষিন উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের দলকুইয়া গ্রামের সীমান্ত থেকে অপহৃত হন টহলে থাকা বিজিবি হাবিলদার লুৎফর রহমান। ২১ জানুয়ারি আহত অবস্থায় অপহৃত বিজিবি সদ্যসকে ফেরত দেওয়ার ২ ঘন্টা পরেই যশোরের শাশাঁ উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন রাশেদুল নামে এক বাংলাদেশী এবং আহত হন ৩ জন। এইসব সীমান্ত নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা স্মরন করিয়ে দেয় পুরানো অনেক নির্যাতন আর সীমান্ত হত্যাকে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিগত ১০ বছরে বিএসএফ এর হাতে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৯৪ জন, ২০০২ সালে ১০৫ জন, ২০০৩ সালে ৪৩ জন, ২০০৪ সালে ৭৬ জন, ২০০৫ সালে ১০৪ জন, ২০০৬ সালে ১৪৬ জন, ২০০৭ সালে ১২০ জন ও ২০০৮ সালে ৬২ জন বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের হাতে নিহত হন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১১ অনুযায়ী ২০০৯-২০১১ এই তিন বছরে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ২০৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৯৮ জন, ২০১০ সালে ৭৪ জন এবং ২০০৫ সালে ১৫ বছরের কিশোরি ফেলানীসহ ৩১ জন। একই সময় বিএসএফের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্বক আহত হয়েছে ৯৮৭ জন, অপহরনের শিকার হয়েছে অন্তত ১,০০০ নিখোঁজ হয়েছেন ২০০ রও বেশি মানুষ। সীমান্ত-হত্যা বিষয়ে অধিকার-এর প্রতিবেদনে আরো উল্লেখিত হয়, নিরস্ত্র নারী-পুরুষ, শিশুকে বিএসএফ হয় গুলি করে হত্যা করছে নতুবা নির্যাতন করে আহত করছে। এমনকি বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে কৃষি-জমিতে কর্মরত কৃষককেও গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুঁড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তজাতিক সীমানা পিলারের কাছ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় কাঁটা তারের বেড়ায় কাপড় আটকে গেলে ফেলানী (১৫) নামে এক কিশোরীকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। পাঁচ ঘন্টা তার লাশ কাঁটাতারের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে, ঝুলতে থাকে তার চুল গুলা। সাথে সাথেই আমাদের আবেগও ঝুলতে থাকা চুল গুলোর সাথে দুলতে থাকে। ৫ ঘন্টা এই অবস্থায় রাখার পর বিএসএফ তার লাশ ভারতে নিয়ে যায়। এই ঘটনার সাথে বাড়তে থাকে ঘৃণা , ঘৃনা গুলা দল বেঁধে ছুটতে থাকে ওই পারে।
এসব পরিসংখান প্রকাশের মাধ্যমে অতীত মাথাচাড়া দিয়ে উঠার পাশাপাশি তার সাথে উঠে আসে তিস্তা নদীর সঠিক হিস্যা আর টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুও। আর তারই প্রেক্ষিতে শানিত হয় এই সাইবার যুদ্ধ। বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্সের জন্মই হয়েছিল বাংলাদেশের সাইবার স্পেসকে সুরক্ষিত ও শত্রুমুক্ত রাখার উদেশ্যে। ব্লাক হ্যাটের অঙ্গিকার, শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও আমরা বাংলাদেশের সাইবার স্পেসকে সুরক্ষিত করে যাব। বিদেশী হ্যাকারদের আক্রমন প্রতিহত করব।
পরিশেষেঃ
বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স কখনই বাংলাদেশের সাইবার স্পেস নিয়ে কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে না এবং এটি আমাদের মূলনীতি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স শুধু মাত্র দেশীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। কোন ধরনের ব্যাক্তিগত বা টাকার বিনিময়ে কোন কাজ করে না। দেশের জন্য কিছু করতে পারাটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের, গর্বের। আমরা বাংলাদেশী হিসেবে জন্ম গ্রহণ করে গর্বিত। আসুন দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমাদের সবার অংশগ্রহনে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, উন্নত বিশ্বে আমরাও মাথা তুলে দাড়াব। দেখিয়ে দেব আমাদের দেশ প্রেমের শক্তি, যা আমরা দেখিয়েছি ৭১ সালে।
লেখাটি পূর্বে http://bd-black-hat.blogspot.com/2015/08/blog-post.html এখানে প্যকাশিত।এবং এডমিনের অনুমতি নিয়ে লেখাটি প্রকাশ করা হয়েছে।
0 comments:
Post a Comment